রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১

মিরসরাইয়ে ব্রীজ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৫ বছর! দুর্ভোগে দুই গ্রামের ৫ হাজার মানুষ




মিরসরাইয়ে জনবহুল এলাকায় ব্যস্ততম সড়কের উপর নির্মিত ব্রীজ ভেঙে যাওয়ার কারণে ৫ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, দুর্ভোগে দুই গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ। উপজেলার ৩নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ তাজপুর ও ৫নং ওসমানপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পূর্ব সাহেবপুর এই দুই ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী ডালিয়া খালের উপর নির্মিত মোহাম্মদীয়া বটতল সংযোগ ব্রীজ। ১৯৮৬ সালে নির্মিত আড়াই কিলোমিটারের ইয়াকুব আলী সড়কের ৩৫ বছরের পুরনো ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ব্রীজটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

তাজপুর বড় জামে মসজিদ, তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিষুমিয়ারহাট মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ওসমানপুর উচ্চ বিদ্যালয়, জোরারগঞ্জ জেবি উচ্চ বিদ্যালয়, মারকাজুল উলুম মাদ্রাসা এবং


জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ, বারইয়াহাট কলেজ ও মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ুয়া দুই গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিকল্পহীন একমাত্র সড়কের উপর নির্মিত ব্রীজ এটি। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বটতল যুব ও তরুণ সংঘ।

এক সময়ের ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের এই ব্রীজটি ভাঙ্গার ফলে প্রতিনিয়তই বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ, এছাড়াও ব্রীজের মাঝখানে ভেঙে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, ব্রীজের বেশকিছু অংশে ফাটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।

প্রায় দশ মাস আগে সত্তর বছর বয়স্ক নুরুল আবছার নামে একজন এই ব্রীজ দিয়ে পার হতে গিয়ে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে মৃত্যুবরণ করেন।

গত তিন মাস আগে দুইটা শিশু পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। স্থানীয়রা শিশু দুইজনকে দ্রুত উদ্ধার না করলে প্রাণহানির সম্ভাবনা ছিলো।

সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্রীজ ভাঙ্গার বিষয়টি ভাইরাল হলেও ব্রীজটি সংষ্কারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারী না থাকায় স্থানীয়রা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে সেই সাথে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পঁচাত্তর বছর বয়স্ক কৃষক হোরা মিয়া বলেন, ভাঙা ব্রীজের কারণে ফসল আনানেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়, এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও ভয় হয়। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে ব্রীজটি।


তাজপুর বড় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোঃ ইব্রাহিম বলেন, সচরাচর চলাচল ছাড়াও একটা মানুষ মারা গেলে লাশ নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ষাটোর্ধ মোঃ মানিক বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভাঙা এই ব্রীজ দিয়ে চলাচলে খুব কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও চালক মোশারফ হোসেন বলেন, সড়কটি দিয়ে এখন পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অসুস্থ্য রোগী ও ভারী কোন জিনিস আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন দুই গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ও মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ এই ব্রীজ ভাঙ্গা থাকায় বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি, প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা ও আহত হওয়ার ঘটনা।

স্কুল ছাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ এই অবস্থা। চলাচল করতে গিয়ে আমিও আহত হয়েছি। মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, ব্রীজের মাঝখানে ভেঙে বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় ভয়ে ভয়ে যেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও জোরারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন বলেন, পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কের এই ব্রীজটি ভেঙে পাঁচ বছর যাবৎ দুর্ভোগ, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মাদ্রাসা ও স্কুলে চলাচলকারী ছাত্র ছাত্রীদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অভিভাবকরা আতংকে থাকে। উক্ত ব্রীজের কাজ দ্রুত সংস্কার অথবা নতুন সেতু স্থাপন করে জনবহুল এলাকার মানুষের কষ্ট লাগবে এগিয়ে আসতে জনপ্রতিনিধি ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মিয়া ইয়াকুব আলী সড়কের উপর নির্মিত বটতল ব্রীজটি ভাঙ্গার ফলে জনদূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, ইতিমধ্যে ব্রীজের জন্য মাটি পরীক্ষার পর রিপোর্ট সংগ্রহ করে নিয়েছে। টেন্ডার হলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সবার আগে এই ব্রীজের কাজটা শুরু হবে।
জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ তাজপুর এলাকার ডালিয়া খালের উপর নির্মিত ক্ষতিগ্রস্ত বটতল ব্রীজটি সম্পর্কে অবগত আছি। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের একটা টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্রীজের মাটি পরীক্ষার পর রিপোর্ট সংগ্রহ করে এবং আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে উক্ত সেতুর কাজ শুরু হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বটতল ব্রীজ সংস্কারের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি, সরেজমিন পরিদর্শন করে উক্ত স্থানের মাটি পরীক্ষার পর রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে এবং টেন্ডার হলে কাজ শুরু হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন